কুড়িগ্রামে সীমানা ফলক থেকে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল সরিয়ে ফেলা হয়েছে

9

কুড়িগ্রাম জেলার কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী মহাসড়কের কুমরপুর ব্রিজের পূর্ব পাশে ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের নির্মিত একটি সীমানা ফলক থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বাংলা ট্রিবিউন জানিয়েছে, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে নির্মিত এ সীমানা ফলকের সব কিছু অবিকৃত থাকলেও ফলকের উভয় পাশ থেকে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল অপসারণ করা হয়েছে। সীমানা ফলকে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপনের পর তা অপসারণে ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি)-র বরাদ্দ থেকে প্রায় ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে ফলকটি নির্মাণ করা হয়। ফলকটির একদিকে ‘স্বাগতম ভিতরবন্দ ইউনিয়ন’এবং অন্যদিকে ‘খোদা হাফেজ ভিতরবন্দ ইউনিয়ন’ লিখে উভয়দিকে ‘বাল্য বিবাহকে না বলুন’ শ্লোগান লেখা হয়। এছাড়াও ফলকের উভয় দিকের শীর্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৬ ইঞ্চি বাই ২৪ ইঞ্চি দুটি ম্যুরাল বসানো হয়। কিন্তু ফলকের উভয় দিকে সব কিছু ঠিক থাকলেও ফলক থেকে ম্যুরাল দুটি কয়েক দিন আগে অপসারণ করা হয়েছে। ফলক থেকে জাতির পিতার ম্যুরাল অপসারণ হলেও জানেন না প্রকল্পের সভাপতি ও ৬ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আছমা বেগম। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। কে কখন জাতির পিতার ম্যুরাল সরিয়েছে সে ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। তবে স্থানীয়রা বলছেন, ম্যুরাল স্থাপন না করলে না করতো, কিন্তু স্থাপনের পর জাতির পিতার ম্যুরাল সরিয়ে ফেলা তাঁকে অবমাননার শামিল।

ফলক থেকে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল অপসারণে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মিজানুর রহমান বুলবুল। তারা বলছেন, সীমানা ফলক থেকে জাতির পিতার ম্যুরাল সরিয়ে ফেলার বিষয়ে তারা কিছুই অবগত নন। কালক্ষেপণ না করে নির্ধারিত স্থানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল  পুনঃস্থাপনের দাবি জানান তারা।

মুক্তিযুদ্ধে ৬ নং সেক্টরে যুদ্ধ করা ওই ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা নাজিমুদ্দিন দাবি করেন, ফলক থেকে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল সরানো মেনে নেওয়া যায় না। এটা যাতে যথাস্থানে বসানো হয় আমি সেই দাবি জানাই। তিনি দাবি করেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একজন তালিকাভুক্ত রাজাকারের ছেলে।

জানতে চাইলে ভিতরবন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, আমি ওই ফলকের উভয় দিকে জাতির পিতার ম্যুরাল স্থাপন করেছিলাম। কিন্তু এলজিএসপি প্রকল্পের ডিস্ট্রিক্ট ফেসিলেটর ম্যুরাল না সরালে প্রকল্পের বিল ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। তখন আমি ম্যুরাল সরিয়ে নিতে বাধ্য হই। পরে ম্যুরাল সরালে তিনি প্রকল্পের বিল পরিশোধ করেন।

রাজাকারের তালিকায় নিজের বাবার নাম থাকার কথা স্বীকার করে চেয়ারম্যান বলেন, আমার বাবার নাম রাজাকারের তালিকায় থাকলেও তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের হয়ে গোয়েন্দাগিরি করতেন। এটা জেলার মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডাররা ভালো করে জানেন। আর আমি নিজেই বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল তৈরি করে নিয়ে এসেছিলাম। ডিস্ট্রিক্ট ফেসিলেটর সেটা কেন অপসারণ করালেন সেটার জবাব তিনি দেবেন।

জাতির পিতার ম্যুরাল অপসারণ নিয়ে চেয়ারম্যানের দাবির বিষয়ে জানতে এলজিএসপি প্রকল্পের ডিস্ট্রিক্ট ফেসিলেটর ফারুক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,যত্রতত্র জাতির পিতার ছবি স্থাপন না করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সম্বলিত একটি চিঠি আমাদের প্রকল্প দপ্তর থেকে পাঠানো হয়েছিল। সেই নির্দেশনা মোতাবেক আমি ওই স্থান থেকে জাতির পিতার ছবি সরিয়ে নিতে বলেছি। তারা ম্যুরাল স্থাপনের আগে আমাকে ফলকের ডিজাইনও দেখাননি।  ওই স্থানে অন্য কোনও শ্লোগান লাগানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নূর আহমেদ মাছুম বলেন, এ বিষয়ে ( ম্যুরাল স্থাপন ও অপসারণ) আমাকে কিছু জানানো হয়নি। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।