ঐক্য পরিষদের সভার সিদ্ধান্তসমূহ

2

সংবাদদাতা।। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ তারপ্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। ২০১৫ সালে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় গৃহীত ৭ দফা দাবিসমূহের আলোকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগএকাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের ৩.২৯ অনুচ্ছেদে সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব- জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক কমিশন গঠন, দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়ন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশনের যথাযথ বাস্তবায়ন অন্তর্ভুক্ত করে ইশতেহার ঘোষণা করে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এ সমস্ত প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়নে যথাযথ উদ্যোগ পরিলক্ষিত না হওয়ায় ২০২২ সাল থেকে ঐক্য পরিষদ দাবি আদায়ের আন্দোলনের অংশ হিসেবে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল, আলোচনা সভা ও সাংবাদিক সম্মেলন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে প্রায় আড়াই লক্ষ স্বাক্ষরসম্বলিত স্মারকলিপি পেশ, রোডমার্চ, মহাসমাবেশ, দেশব্যাপী অনশন পালন করা হয়এবং আন্দোলনের পাশাপাশি সরকারের সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুলকাদের এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করা হয়।  আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৪৮ঘন্টার গণঅনশনে সরকারের পক্ষে জনাব কবির বিন আনোয়ার অনশন  স্থলে উপস্থিত হয়ে যুক্তি দেখান যে, করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সরকারের দেয়া প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়ন সম্ভব না হলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনে অন্ততপক্ষে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবিসমূহ পূরণ করা হবে। কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি।এমতাবস্থায় গত ৫ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ উপলক্ষে গঠিত ইশতেহার কমিটির আহ্বায়ক কৃষিমন্ত্রী জনাব আব্দুর রাজ্জাকএমপি’রআমন্ত্রণে ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধি দল সাক্ষাত করে ২০১৮ সালের ইশতেহারে সংখ্যালঘু স্বার্থ সম্পর্কিত অঙ্গীকারসমূহ পুনরায় ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয়। ইশতেহার কমিটির আহ্বায়ক পূর্বোক্ত অঙ্গীকারসমূহ আগামি নির্বাচনের ইশতেহারে পুনরায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেছেন। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন আগামি ৭ জানুয়ারি, ২০২৩ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে এবং প্রার্থীরা নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছে। এ কার্যক্রম পরিচালনাকালে দেশের নানান স্থানে প্রার্থীদের কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতা শুরু হয়েছে যাতে বিভিন্নœ নির্বাচনী এলাকায় সংখ্যালঘু জনমনে গভীর শঙ্কা ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আজকের এই কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভায় নি¤েœাক্ত  সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ করা হয়েছে।

১.আজকের এ সভা এ মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে যে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোনো পর্যায়ে কেউই কোনোভাবে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ব্যানার ব্যবহার করে কোনো ধরণের নির্বাচনী কার্যকলাপে কোনো প্রার্থীর পক্ষে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

২. আজকের এ সভা যেসব প্রার্থী ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার সাথী বলে বিবেচিত হবেন ঐক্য পরিষদ তাদের সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

৩. অদ্যকার এ সভা অতীতে যেসব রাজনীতিক সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধ     ভূমিকা পালন করেছেন এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জায়গা-জমিজবরদখল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও নির্যাতনে যুক্ত থেকে এবং ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করে সংখ্যালঘু স্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত ছিলেন এবং বর্তমানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে ভোট না দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে।

৪. অদ্যকার এ সভা এবারের সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নানান প্রার্থী ছাড়াও একই রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মধ্যে ইতোমধ্যে সংঘাতের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বিধায় এবং অতীতের নির্বাচনের পূর্বাপর দুর্ভাগ্যজনক অভিজ্ঞতার আলোকে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের শঙ্কা ও উদ্বেগ বিরাজ করছে বিধায় আসন্ন নির্বাচনের পূর্বাপর অন্তত তিন সপ্তাহ সারাদেশে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন রাখার জন্য নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে। ঐক্য পরিষদ নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি জিরো টলারেন্স প্রত্যাশা করছে।

৫. অদ্যকার এ সভা ধর্মকে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চলমান নির্বাচনী প্রচারণায় ধর্ম ও  সাম্প্রদায়িকতা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবহারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কঠোর পদক্ষেপ কামনা করছে।

৬. আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে ৭২-র সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব রক্ষা ও সমঅধিকার-সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক কমিশন গঠন, দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশনের যথাযথ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ঘোষণার দাবি জানাচ্ছে। একই সঙ্গে অতীত নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে দলের উদ্যোগ‘নেওয়া-না নেওয়া’ পর্যালোচনা করে পরবর্তী কমসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

৭. আজকের  এ সভা কুমিল্লা-৬ আসনের সাংসদ ও বর্তমানে নির্বাচনে প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের নির্বাচনী প্রচারণায় সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে যেসব উষ্কানীমূলক বক্তব্য ও হুমকি প্রদান করা হচ্ছে তাতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং এ ব্যাপারে নির্বাচনের পূর্বাপর সংখ্যালঘুদের নির্ভয়ে নির্বিঘেœ ভোটদানের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে।

৮. বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা নির্বাচনকে সামনে রেখে একসঙ্গে কাজ করবে।

৯. আজকের এ সভা গত ৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ ইং তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় নির্বাচন সম্পর্কে কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের আহ্বায়ক কাজল দেবনাথ ও সদস্য সচিব রঞ্জন কর্মকারের উপর অন্যুন ১০ জন সদস্যকে কো-অপ্ট করার দায়িত্ব অর্পণের এবং সারা দেশের জেলা/মহানগরসহ তৃণমূল পর্যায়ে অনুরূপ কমিটি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছে।