দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

2

ডেস্ক রিপোর্ট ।। দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র স্থানীয় সময় সোমবার (বাংলাদেশ সময় সোমবার মধ্যরাতের পর) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আজিজ আহমেদ তাঁর পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অযোগ্য ঘোষণার কথা জানানো হয়েছে

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার কারণে সাবেক জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদকে, পূর্বে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান, ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তর এর ফলে আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য হবেন

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাঁর (আজিজ আহমেদ) কর্মকান্ডে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অবমূল্যায়ন এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা কমেছে

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, আজিজ আহমেদ তার ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকান্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করেন এটা করতে গিয়ে তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন ছাড়া অন্যায্যভাবে সামরিক খাতে কন্ট্রাক্ট পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন তিনি নিজের স্বার্থের জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন

সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে, আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান আইনের শাসন শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনরায় নিশ্চিত করা হলো সরকারি সেবা আরও স্বচ্ছ নাগরিকদের সেবা লাভের সুযোগ তৈরি, ব্যবসা নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার উন্নয়ন এবং মুদ্রা পাচার অন্যান্য অর্থনৈতিক অপরাধের অনুসন্ধান বিচার নিশ্চিতে সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টায় সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জনসমক্ষে আনার আগে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র তবে তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রঘোষিত ভিসানীতির অধীনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি অন্য আইনের (অ্যাক্ট) অধীনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিতমিট দ্য রিপোর্টার্সঅনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ব্যাপক চাঞ্চল্য

দৈনিক মানবজমিন বলেছে, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার খবরে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে খবরটি এসেছে ভোররাতে তখন বাংলাদেশের মানুষ সবাই ঘুমিয়ে ঘুম থেকে উঠে তারা এই আলোড়ন সৃষ্টিকারী খবরটি দেখতে পান জেনারেল আজিজ ক্ষমতার অপব্যবহার দুর্নীতি নিয়ে বরাবরই আলোচিত যুক্তরাষ্ট্র অনেক আগেই তার ওপর নজর রাখছিল মার্কিন পররাষ্ট্র কর্মকর্তা ডনাল্ড লু সাম্প্রতিক ঢাকা সফরের পর সবাই ধারণা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বোধ করি সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যে তার নীতিতে অটল থাকে এটা তারই প্রমাণ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে বৈঠকের সময় ডনাল্ড লু আরও কিছু বিষয়ে ইঙ্গিত করেছেন তার সফরের পর সরকারি মহলে যথেষ্ট উচ্ছ্বাস ছিল

বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র দুদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে নানা সূত্রের খবর, পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বিদেশে যারা টাকা পাচার করেছেন তাদের ওপর যদিও এর কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা যায়নি

কাতারভিত্তিক টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আল জাজিরায় জেনারেল আজিজের দুর্নীতি নানা অনিয়মের খবর প্রচারের পর যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে গত ফেব্রুয়ারিতেঅল দ্য প্রাইম মিনিস্টার মেননামে রিপোর্টটি প্রচার করে আল জাজিরা 

এতে সামি (ছদ্মনাম) নামের হাঙ্গেরিতে বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্যক্তির সহায়তায় হারিস আহমেদ নামের একআসামি পরিচয় প্রকাশ করা হয় হারিস বুদাপেস্টেমোহাম্মদ হাসাননামে বসবাস করছিলেন তিনি আজিজ আহমেদের ভাই আহমেদ পরিবারের বাকি সদস্যদের বিরুদ্ধেও নানা অপকর্মের অভিযোগ প্রকাশ করা হয় আজিজ আহমেদ অবশ্য তখন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন জেনারেল আজিজ আহমেদ ২০২১ সালের ২৪শে জুন অবসরে যান

সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদ দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ২০১৮ সালের ২৫ জুন ২০২১ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত সময়ে তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন